Summary
মি. হাবীব সম্প্রতি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত নতুন শিল্প ইউনিটের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বাবার ব্যবসায়িক চিন্তাধারার প্রতি ক্রিটিক্যাল, বিশেষ করে জনশক্তি নিয়োগে। মি. হাবীব অভিজ্ঞতার পরিবর্তে সদ্য পাসকৃত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি পালন করতে অস্বীকার করেছেন। ফলস্বরূপ, তিনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং বুঝতে পারছেন যে আবেগ দিয়ে ব্যবসা চলতে পারে না।
এখন তিনি পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন। পরিকল্পনার মাধ্যমে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তা হলো:
- প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন: কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর করা এবং ঝুঁকি কমিয়ে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করে।
 - ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ: ভবিষ্যতের সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনার মাধ্যমে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা হ্রাস করা যায়।
 - ব্যয় ও অপচয় হ্রাস: আগে থেকে চিন্তা করলে বাহুল্য ব্যয় হ্রাস পায়। বাজেট ব্যবস্থাপনা মিতব্যয়িতার সহায়ক।
 - উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার: পরিকল্পনার মাধ্যমে মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
 - সঠিক কার্যধারা অনুসরণ: পরিকল্পনা কর্মীদের জন্য একটি স্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করে, যা কার্য সম্পাদনে সহায়ক।
 - ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন: পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের জন্য ভিত্তি সরবরাহ করে, যেমন সংগঠন, নির্দেশনা, ও নিয়ন্ত্রণ।
 
সদ্য পাসকরা মি. হাবীব বাবার গড়া নতুন শিল্প ইউনিটের দায়িত্ব নিয়েছেন । বাবাকে রাতদিন ব্যবসায় নিয়ে যেভাবে ভাবতে দেখেছেন তা তার নিকট পছন্দের মনে হয়নি । তার ভাবনা, এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে । নতুন জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে । বাবাকে বললেন, কী কী পদে লোক নিয়োগ দিতে হবে- এটা ঠিক করে দাও । এরপর আমি আমার পছন্দমতো লোক নিয়ে নেবো । বাবা বললেন, আগে ভাবো কী মানের, কোন ধরনের লোক, কোত্থেকে, কিভাবে সংগ্রহ করতে হবে । পরিকল্পনা নিয়ে কাজ না করলে সমস্যায় পড়বে । মি. হাবীবের ভাবনা, মানুষ তো সব শিখে আসে না । করতে করতে শিখবে । তিনি অভিজ্ঞ লোক নিয়োগের বিষয়টি মাথায় না নিয়ে সদ্য পাস করা ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন । নিয়োগ দিতে যেয়ে প্রতিষ্ঠানের যে সু-নির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি ছিল তা না মেনে বন্ধু-বান্ধবদের সুপারিশ আমলে নিয়েছেন । প্রতিষ্ঠান চালাতে যেয়ে এখন তিনি হাড়ে হাড়ে সমস্যা অনুভব করছেন। না নিজে তেমন কিছু বুঝছেন না কারও সহযোগিতা পাচ্ছেন । তাই প্রতিষ্ঠান আর ঠিকমতো চলছে না । তিনি বুঝতে পারছেন আবেগ দিয়ে ব্যবসায় চলে না । ভেবে-চিন্তে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবসায় চালাতে না পারলে বিপদে পড়তেই হয় । পরিকল্পনার গুরুত্ব এখন তার নজরে এসেছে ।
উপরের উদ্দীপক বিবেচনায় নিলে এটা স্পষ্ট যে, পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় । যা প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনকে ব্যাহত করে । বিভিন্ন দিক থেকে পরিকল্পনার গুরুত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জন (Accomplishment of organisational objectives) : পরিকল্পনার প্রধান কাজ হলো কার্যক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর এবং ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা হ্রাসপূর্বক সহজতম পন্থায় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করা । পূর্ব পরিকল্পনা থাকায় নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়কগণ এর আলোকে সহজেই করণীয় নির্ধারণ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে । তাই কার্যকর পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি প্রথম ও প্রধান কার্য ব্যবস্থা ।
২. ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (Development and expansion of business) : পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের ও বাইরের যে সকল সমস্যা ভবিষ্যতে মোকাবিলা করতে হতে পারে তা সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে তদনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । যা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ের ঝুঁকি হ্রাস ও অনিশ্চয়তা দূর করে এর কার্যকলাপ সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন সহজতর করে ।
৩. ব্যয় ও অপচয় হ্রাস (Minimization of cost and wastage) : আগে থেকে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ শুরু করা হলে সেক্ষেত্রে বাহুল্য ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পায় । এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে যদি বাজেট থাকে এবং বাজেটের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয় তবে মিতব্যয়িতা অর্জন সহজ হয় । এ ছাড়া জনশক্তি ও অন্যান্য উপকরণের অপচয় হ্রাস করতেও পরিকল্পনা সাহায্য করে ।
৪. উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার (Effective utilization of resources) : যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে এতে নিয়োজিত মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কাজ করা হলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় । এর ফলশ্রুতিতে প্রত্যেকটি উপায়-উপকরণের কার্যদক্ষতা বাড়ে । আর দক্ষতার উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত করতে পারে ।
৫. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Following proper course of action) : পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করে । প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি, বিভাগ ও উপ- বিভাগ পরিকল্পনার অধীনে কাজ করায় প্রত্যেকে তাদের করণীয় সম্পর্কে আগাম জানতে পারে । এতে মানসিক প্রস্তুতি সহকারে কার্য সম্পাদন সম্ভব হয় ।
৬. ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন (Implementation of other managerial functions) : পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সমুদয় কাজের ভিত্তিস্বরূপ । পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজ; যেমন-সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্য সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায় না । তাই পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কাজের সঠিক বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা প্রদান করে ।
Read more